ব্রিটিশ সাংবাদিক জনাথন হেড সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে সাংবাদিকদের একটি দলের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের এই দলে অংশগ্রহণের শর্ত ছিল, সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। স্বাধীনভাবে কোথাও চলাফেরা করা যাবে না। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গাগুলোতেই শুধু তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে। সেটাই করা হয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিদর্শনের মাঝেও রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের এক ভয়াবহ চিত্র এক সাংবাদিকের চোখে পড়েছে।
নিজের দেখা রোহিঙ্গা গ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, গ্রামটিতে ঢুকে প্রথম বাড়িতেই আগুনের চিহ্ন দেখা গেল। আগুন দেওয়া হয়েছে আরও অনেক বাড়িতে। মনে হলো, কিছুক্ষণ আগেই এই আগুন দেওয়া হয়েছে। একদল তরুণকে তলোয়ার ও দেশলাই হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা গেল। চোখে পড়ল গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গৃহস্থালি পণ্য, শিশুদের খেলনা ও নারীদের পোশাক।
জনাথন হেড বলেছেন, তিনি একটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়ে যেতে দেখেছেন। রাখাইনের মংগদু জেলায় আল লে থান কিয়া শহর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় কিছু পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িঘর তাঁর নজরে আসে। তখনো সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। যদিও ২৫ আগস্ট পুলিশ চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) জঙ্গিদের হামলার পর শুরু হওয়া সেনা অভিযানে বেশির ভাগ বাসিন্দাই পালাতে বাধ্য হন। জনাথন বলেন, ‘সেখানে থাকতেই আমরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ শুনতে পাই। অন্তত তিনটি স্থান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখি।’
জনাথন বলেন, ‘আমাদের পেছনে বনের পাশে ধানখেত থেকে বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছিল। সেটি স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছিল একটি গ্রাম। বিষয়টি জানার জন্য আমরা সেখানে ফিরে যাই। পৌঁছানোর পর গ্রামের প্রথম বাড়িতেই আগুনের চিহ্ন দেখতে পাই। চিহ্ন দেখে স্পষ্ট মনে হয়, কিছুক্ষণ আগেই সেখানে আগুন লাগানো হয়েছে।’
জনাথনের বর্ণনায়, ‘গ্রামটিতে যখন হাঁটছিলাম তখন তরুণদের একটি দল চোখে পড়ে। তাদের হাতে দেশলাই ও তলোয়ার ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করলেও তারা রাজি হয়নি। তাদের ছবিও তুলতে দেয়নি। আমাদের মিয়ানমারের সহকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তরুণদের একজন স্বীকার করেন, তিনি রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছেন। এ জন্য তিনি পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন।’
পাঠকের মতামত: